ডোমেইন হোস্টিং কেনার আগে যা যা চেক করতে হবে | Domain Hosting Guides

সঠিক ডোমেইন হোস্টিং সার্ভিস নির্বাচন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যে কেউ একটি অনলাইন বিজনেস প্রতিষ্ঠা করার জন্য একটা ওয়েবসাইট প্রয়োজন হয়৷ তাই ডোমেইন হোস্টিং কেনার আগে যা যা চেক করতে হবে তা জানতে হবে।

ভালো একটি ডোমেন হোস্টিং সার্ভিস প্রোভাইডার না হলে ওয়েবসাইটের সিকিউরিটি, ডোমেনের security, এবং আপনার ট্রানজেকশন হিস্ট্রি, এছাড়াও আরও অনেকগুলো বিষয় যেগুলোর সমস্যা তৈরি করতে পারেন। এজন্য আমাদেরকে যেকোনো একটি ওয়েবসাইট তৈরি করার আগে কিছু বিষয় সম্পর্কে আমাদের জেনে নিতে হবে।

১. কর্মক্ষমতা এবং নির্ভরযোগ্যতা | ডোমেইন হোস্টিং কেনার আগে এটি চেক করতে হবে

সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, হোস্টিং প্রদানকারীর সার্ভার আপটাইম গ্যারান্টি নিয়ে রিসার্চ করুন। আপনার ওয়েবসাইট ভিজিটর ধারাবাহিকভাবে যেন ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারে তা নিশ্চিত করতে কমপক্ষে 99.9% আপটাইম গ্যারান্টি সহ একটি সার্ভিস প্রদানকারীকে বেছে নিন।

ডোমেইন হোস্টিং কেনার আগে এই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ না বরং বাধ্যতামূলক। আপটাইম খারাপ হলে একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। বাংলাদেশের অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা রিসেলার বিজনেস করে হোস্টিং সেবা দেন। সেলারদের কাছ থেকে কখনও ডোমেইন হোস্টিং ক্রয় করবেন না।

২. লোডিং গতি ডোমেইন হোস্টিং কেনার আগে চেক করতে হবে

ওয়েব পেজ লোডিং স্পীড ভিজিটরদের অভিজ্ঞতা এবং এসইও জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। এমন একটি হোস্টিং সার্ভিস প্রদানকারী বেছে নিন যেটি উচ্চ-পারফরম্যান্স সার্ভারে বিনিয়োগ করে এবং ওয়েবসাইটের গতি বাড়ানোর জন্য টুলস ও নেটওয়ার্ক (CDN) এর মতো সুবিধা অফার করে৷

বর্তমানে ৯৯% ওয়েবসাইট ট্রাফিক হারানোর মূল কারণ হচ্ছে ওয়েব পেজের লোডিং স্পীড খারাপ হওয়া। গুগল এডসেন্স ইনকাম করার জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

৩. হোস্টিং প্ল্যান বা সার্ভিস পরিবর্তন সুবিধা

আপনার ওয়েবসাইটে যখন ট্রাফিক এর সংখ্যা নিয়মিত বৃদ্ধি হতে থাকবে এবং যখন আপনি বুঝতে পারবেন আপনার বর্তমান হোস্টিং সার্ভিসটি আপডেট করা প্রয়োজন, তখন যেন আপনার হোস্টিং প্রোভাইডার আপনাকে কোন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন করিয়ে না দেয়। সেজন্য একটি ভাল কোম্পানির কাছ থেকেই পোস্টিং সেবা গ্রহণ করতে হবে।

এক্ষেত্রে দুটি বিষয় রয়েছে। যখন আপনার হোস্টিং সার্ভার পরিবর্তন করার প্রয়োজন হবে, তখন আপনি যে কোম্পানির কাছ থেকে নিয়েছেন ঠিক একই কোম্পানির কাছ থেকে যদি নতুন আরেকটি উন্নত মানের হোস্টিং প্ল্যান ক্রয় করতে চান, সে ক্ষেত্রে যেন আপনার কোম্পানি আপনার তথ্যগুলো মাইগ্রেট করে দিয়ে আপনাকে টেকনিক্যাল সমস্যা থেকে বাঁচিয়ে রাখবে। এই বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে।

আরও পড়ুন:   ব্লগিং করে কত টাকা আয় করা যায় বিস্তারিত পড়ুন

আবার আমরা অনেক ক্ষেত্রে যে কোম্পানির কাছ থেকে হোস্টিং সেবা ব্যবহার করে যাচ্ছি সেই কোম্পানির কাছ থেকেই হোস্টিং না নিয়ে ভিন্ন কোন উন্নত মানের সার্ভার থেকে হোস্টিং ক্রয় করার চেষ্টা করি। এই ক্ষেত্রে আপনার সার্ভিস প্রোভাইডার যদি আপনার তথ্যগুলোকে ব্লক করে। অর্থাৎ অন্য একটি সার্ভারে মাইগ্রেট করার সুযোগ সুবিধা না দেয়, তাহলে আপনি পড়ে যাবেন মহাবিপদে।

এইজন্য আপনার সার্ভিস প্রোভাইডার কতটুকু বিশ্বস্ত এবং অন্য একটি সার্ভারে আপনার তথ্য মাইগ্রেট করার জন্য কতটুকু সহযোগিতা করবে সে বিষয়টি আপনাকে প্রথম থেকেই জেনে নিতে হবে।

৪. ডোমেইন হোস্টিং কেনার আগে নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য চেক করতে হবে

নিরাপত্তা সবচেয়ে বেশি এমন হোস্টিং প্রদানকারীদের খোজ করুন। যারা SSL সার্টিফিকেট, নিয়মিত ব্যাকআপ এবং শক্তিশালী নিরাপত্তা প্রোটোকল অফার করে। আপনার ওয়েবসাইট এবং আপনার ভিজিটরদের ডেটা সুরক্ষিত করা একটি শীর্ষ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।

৫. কাস্টমার সাপোর্ট

একটি নির্ভরযোগ্য গ্রাহক সহায়তা অমূল্য, বিশেষ করে যদি সমস্যা দেখা দেয় যেন সাপোর্ট পান। 24/7 গ্রাহক সহায়তার জন্য চেক করুন, কি কি মাধ্যমে সাপোর্ট দিবে? যেমন লাইভ চ্যাট, ইমেল এবং ফোন সহায়তার মাধ্যমে।

৬. খরচ এবং মান যাচাই

সব সময় কম খরচের কথা চিন্তা করলে হবে না। খরচের সাথে সাথে মান কেমন দিচ্ছে? সে বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। আবার এমনটি নয় যে, ভালো মানের জন্য আপনাকে একাধিক টাকাই খরচ করতে হবে। আপনাকে এমন একটি হোস্টিং সার্ভিস নিতে হবে যে সার্ভিস প্রোভাইডার কম খরচে সেরা সার্ভিস প্রোভাইড করে। ডোমেইন হোস্টিং কেনার আগে এটি খুবই প্রয়োজনীয়।

বাংলাদেশের মধ্যে সুনামধন্য কয়েকটি ডোমেন হোস্টিং সার্ভিস প্রোভাইডার রয়েছে। তাদের নাম অবশ্যই আমরা আপনাদের জন্য এই আর্টিকেলটিতে দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব। তবে সব সময় চেষ্টা করতে হবে একটি আন্তর্জাতিক সার্ভার থেকেই ডোমেন হোস্টিং ক্রয় করার জন্য।

৭. ডোমেন ম্যানেজমেন্ট টুলস চেক করতে হবে

সবগুলো কোম্পানি আপনাকে ডোমেন ম্যানেজ করার জন্য পরিপূর্ণ এক্সেস দিবে না। বিশেষ করে বাংলাদেশের মধ্যে অনেক রিসেলার সার্ভিস প্রোভাইডার রয়েছে যারা আপনাকে এই প্রতারণার মধ্যে ফেলতে পারে। আন্তর্জাতিক যেই সার্ভিস প্রোভাইডার রয়েছে তাদের মধ্যে 99% এই ধরনের সমস্যা থেকে আপনাকে বাঁচিয়ে রাখবে।

আরও পড়ুন:   Affpilot AI দিয়ে Adsense ও Ezoic এপ্রুভ করার ৫টি টিপস

তবে এমনটি নয় যে, বাংলাদেশের মধ্যে সবগুলো ডোমেইন সার্ভিস প্রোভাইডার এমন প্রতারণা করবে। এক্ষেত্রে এমন প্রতারণা থেকেই রক্ষা পাওয়ার জন্য আপনাকে বিশ্বস্ত একটি ডোমেইন হোস্টিং প্রোভাইডারের সন্ধান করে নিতে হবে।

যেমন ডিএনএস ম্যানেজমেন্ট এবং যেকোনো মুহূর্তে নেম সার্ভার পরিবর্তনের সুবিধা, ডোমেন ট্রান্সফার সুবিধা, ইত্যাদি দিচ্ছে কিনা সে বিষয়টি জেনে নিতে হবে।

৮. ব্যাকআপ এবং রিস্টোর অপশন

এটি কেউ নিশ্চয়তা দিতে পারবে না যে, আপনার ওয়েবসাইট ১০০% সুরক্ষিত সব সময় থাকবে। আপনার ভুলের কারণে যেকোনো সময় আপনার ওয়েবসাইটে কিছু না কিছু ফল্ট হতে পারে। এমনকি আপনার ওয়েবসাইটের পরিপূর্ণ তথ্য আপনি হারিয়ে ফেলতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি যে কোম্পানির সার্ভিস ব্যবহার করতে চান, সে কোম্পানি আপনার ওয়েবসাইটের ব্যাকআপ এবং রেস্টোর অপশন দিচ্ছে কিনা সে বিষয়টি চেক করে নিতে হবে।

যেন যেকোনো কারণে আপনার ওয়েবসাইট হ্যা*ক হলে অথবা নষ্ট হয়ে গেলে যেন পুনরায় ফিরিয়ে আনতে পারেন।

৯. সার্ভিস শর্তাবলী এবং রিনিউ নীতিগুলি:

হোস্টিং প্রদানকারীর সার্ভিস শর্তাবলী পড়ুন, এবং তাদের রিনিউ নীতিগুলি বুঝুন। কিছু ডোমেইন হোস্টিং সার্ভিস প্রোভাইডার প্রথমবার হোস্টিং ক্রয় করার ক্ষেত্রে আপনাকে সবচেয়ে কম দামে ডোমেন হোস্টিং সেবা প্রদান করে থাকেন, কিন্তু পরবর্তীতে এটি রিনিউ করতে গেলে আপনার কাছ থেকে হিউজ পরিমাণ অর্থ দাবি করেন। এক্ষেত্রে আপনি যেন এরকম সমস্যার সম্মুখীন না হন তার জন্য ডোমেইন হোস্টিং কেনার আগে বিষয়টি আপনাকে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে।

GoDaddy হচ্ছে এমন একটি কোম্পানি যেটি আমার অপছন্দনীয় একটি কোম্পানি আমার ব্যক্তিগতভাবে, তবে যাদের ভাল বাজেট রয়েছে এটি অনেকের কাছেই পছন্দনীয় একটি কোম্পানি। তারা প্রথমবার খুব কম দামে ডোমেন হোস্টিং প্রদান করে, কিন্তু পরবর্তীতে রিনিউ করতে গেলে বড় একটি অ্যামাউন্ট তাদেরকে পেমেন্ট করতে হয়।

ঠিক একই রকম বাংলাদেশের মধ্যেও কিছু রিসেলার হোস্টিং প্রোভাইডার রয়েছে, যারা কম দামে আপনাকে ডোমেন হোস্টিং সেবা দিবে, কিন্তু পরবর্তী বছর রিনিউ করতে গেলে আপনার কাছ থেকে দ্বিগুণ টাকা চাইবে।

বাংলাদেশের জনপ্রিয় তিনটি ডোমেন হোস্টিং বাবাইদার কোম্পানি:

যদিও একাধিক ডোমেন হোস্টিং প্রোভাইডার কোম্পানি বাংলাদেশের মধ্যে রয়েছে, কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে যাদের সার্ভিস ব্যবহার করেছি, এবং যাদের কাছ থেকে আমি বেটার সার্ভিস পেয়েছি, এরকম তিনটি ডোমেন হোস্টিং সার্ভিস প্রোভাইডার কে আমি এখানে যুক্ত করতে যাচ্ছি।

আপনারা ইচ্ছে করলে এই তিনটি কোম্পানির কাছ থেকেই ডোমেন হোস্টিং সেবা ক্রয় করতে পারেন, তবে এমনটি নয় যে আপনাকে এই তিনটি কোম্পানির কাছ থেকেই ডোমেন হোস্টিং সেবার ক্রয় করতে হবে। আপনি আপনার ইচ্ছামত যে কোন কোম্পানির কাছ থেকেই এই ধরনের সার্ভিস ক্রয় করতে পারবেন।

আরও পড়ুন:   ওয়েবসাইট তৈরি করার ১১টি প্রয়োজনীয় নিয়ম
১. Hostever – সেরা ও নম্বর ১ বাংলাদেশী হোস্টিং

আমি দীর্ঘদিন যাবত Hostever এর সার্ভিস ব্যবহার করে আছি এবং এটি বাংলাদেশের মধ্যে নাম্বার ওয়ান হিসেবে আমার কাছে পরিচিত। আমি যতগুলো হোস্টিং সার্ভিস ব্যবহার করেছি তার মধ্যে Hostever হচ্ছে সবচেয়ে সেরা একটি হোস্টিং প্রোভাইডার।

তবে এটি শুধুমাত্র বাংলাদেশের জন্য। এদের জনপ্রিয়তা সম্পর্কে এবং সাপোর্ট সম্পর্কে জানার জন্য সরাসরি এর ওয়েবসাইটে গিয়ে সাপোর্ট সেকশন থেকেই আপনি সবকিছু টেস্ট করতে পারেন। এমনকি এদের ওয়েবসাইটের সার্ভিস গুলো চেক করার মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন।

এখানে Hostever ভিজিট করুন

২. Host Seba – সেবায় যারা বিশ্বাসী

হোস্ট সেবা বাংলাদেশের মধ্যে আরেকটি অন্যতম হোস্টিং প্রোভাইডার যারা সেবা দেওয়ার মাধ্যমে বিশ্বাসী। আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে হোস্টিং ক্রয় করে থাকেন, তাহলে Host Seba এর সার্ভিস ক্রয় করতে পারেন। Host Seba সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য তাদের ওয়েবসাইট করতে পারেন।

এখানে Host Seba ভিজিট করুন

৩. Cyber Developer BD

সাইবার ডেভলপার বিডিতে অনেকজন সাইবার এক্সপার্ট রয়েছে, যারা আপনার ওয়েবসাইট কে যেকোনো ধরনের সমস্যা থেকে মুক্ত রাখার জন্য সাপোর্ট দিয়ে থাকেন। এমনকি তাদের হোস্টিং সার্ভিসও অনেক উন্নতমানের। আপনি চাইলে Cyber Developer BD থেকে আপনার কোম্পানির জন্য ডোমেইন হোস্টিং রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন।

এখানে Cyber Developer BD ভিজিট করুন

৩টি আন্তর্জাতিক জনপ্রিয় ডোমেইন হোস্টিং প্রভাইডার:

ডোমেইন হোস্টিং কেনার আগে সংক্ষেপে বিস্তারিত:

সম্মানিত পাঠক, আমাদের এই আর্টিকেলটিতে যে সকল তথ্য শেয়ার করা হয়েছে এগুলো সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত পরীক্ষিত। আপনিও আপনার সার্ভিস ক্রয় করার ক্ষেত্রে নিজেই পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। মনে রাখবেন কোন একটি হোস্টিং কোম্পানি নির্বাচন করার পরে সেখান থেকে আজীবন আপনি তাদের সার্ভিস ব্যবহার করবেন এমনটা নয়।

ডোমেইন হোস্টিং কেনার আগে এ বিষয়গুলো জেনে নেওয়ার জন্য এই জন্যই আমি আপনাদেরকে তথ্য শেয়ার করলাম, যেন আপনারা পরবর্তীতে কোন সমস্যার সম্মুখীন হলেই অন্য কোন সার্ভিস প্রোভাইডার এর কাছে নিজেদের তথ্য ট্রান্সফার করতে পারেন। এর মাধ্যমে নিজের ওয়েবসাইটকে সিকিউর রাখতে পারেন এবং অনলাইন বিজনেস যেন সঠিকভাবে চালিয়ে নিতে পারেন।

Leave a Comment