টাকা সঞ্চয় করার কৌশল | কিভাবে টাকা সঞ্চয় করা যায়

হাতে টাকা থাকলে খরচ হয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। এর জন্য আমরা টাকার সঞ্চয় করে রাখতে পারি না। যদি আপনি টাকা সঞ্চয় করাটাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে থাকেন, তাহলে আজকের এই লেখা থেকে জানতে পারবেন টাকা সঞ্চয় করার কৌশল বা কিভাবে টাকা সঞ্চয় করা যায় সে বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস

সঞ্চয় করা টাকা আমাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে কাজে লাগে। এই জন্য কখনও টাকা সঞ্চয় করা থামানো যাবেনা। আপনি যদি টাকা সঞ্চয় করতে পারেন, তাহলে এটি আপনার বৃদ্ধ বয়সের একটি সম্বল হবে। অথবা এটি আপনার সন্তানদের জন্য একটি আর্থিক সম্পদ হিসেবে বড় একটি পাওয়া না হবে। এজন্য অবশ্যই আপনাকে সবসময় টাকা সঞ্চয় করার একটি চিন্তা-ভাবনা ও পরিকল্পনা করতে হবে। যারা টাকা সঞ্চয় করতে পারেন না, তাদের জন্য মূলত এখানে টাকা সঞ্চয় করার কৌশল নিয়ে আমরা কিছু মতামত শেয়ার করব।

আশা করছি এই গুলো আপনারা অনুসরণ করলে কিভাবে টাকা সঞ্চয় করা যায়। এই বিষয়ে খুব সহজে জানতে পারবেন। এবং এগুলো আপনাদের জীবনের অবশ্যই কাজে লাগবে বলে আমরা মনে করি।

কিভাবে টাকা সঞ্চয় করা যায় বা টাকা সঞ্চয় করার কৌশল

চলুন, তাহলে আমরা এমন কিছু পদ্ধতি জেনে নিই। যেগুলো আমরা অনুসরণ করলে টাকা সঞ্চয় করতে পারব। সম্মানিত পাঠক। এখানে আমরা যে সকল উপায় গুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। এগুলো মূলত সচারাচর সবাই ব্যবহার করে থাকেন। মূলত আপনাদেরকে এই বিষয়গুলোকে পুনরায় মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা এখানে আলোচনা করবো। এই কৌশলগুলো কিন্তু স্বাভাবিক কিছু কৌশল যেগুলো খুবই সহজ এবং যে কেউ অনুসরণ করতে পারবো।

অতিরিক্ত অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং ও ভিডিও দেখা রোধ করা

আমাদের মধ্যে অধিকাংশই বর্তমান সময়ে অনলাইনে ভিডিও দেখার ক্ষেত্রে অনেক টাকা ব্যয় করে ফেলে। আপনি হয়তো এখনো লক্ষ করেন নাই অনলাইনে যখন আমরা ভিডিও দেখি, তখন আমাদের ইন্টারনেটের ডাটাগুলো খুব দ্রুত শেষ হতে থাকে। এবং যেহেতু অনলাইনের ভিডিওগুলো অনেক মজাদার হয়ে থাকে। এ জন্য এগুলো আমাদেরকে আকর্ষিত করে। যতই এই ভিডিও গুলো দেখি আমরা ততোই এই ভিডিওগুলো থেকে মজা পেতে থাকি। এরকম করতে করতে কখন যে আমাদের ইন্টারনেট প্যাক শেষ হয়ে যায়। আমরা বুঝতেই পারিনা।

অতিরিক্ত অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং ও ভিডিও দেখা রোধ করা
অতিরিক্ত অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং ও ভিডিও দেখা রোধ করা

যদি আপনি এরকম অনলাইনে ভিডিও দেখার প্রতি আগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই এই বিষয়টিকে রোধ করা প্রয়োজন। অনলাইনে ভিডিও দেখার রোধ করে এখান থেকে টাকা সঞ্চয় করার জন্য একটি পরিকল্পনা করুন। যত টাকা জমা করতে পারবেন, ততই আপনার ভালো লাগবে। এভাবে করে আপনি আস্তে আস্তে অনলাইনে ভিডিও স্ট্রিমিং থেকে সরে আসতে পারবেন। এবং কম দেখা শুরু হবে নিয়মিত। এরকম যদি আপনি করেন, তাহলে আপনার অনলাইনের ইন্টারনেটের পিছনে খরচ করা টাকা থেকে আপনি টাকা সঞ্চয় করতে পারবেন।

আরও পড়ুন:   পেওনিয়ার বিকাশ এর সাথে লিংক করার নিয়ম

কোন কারণে যদি আপনি অনলাইনে ভিডিও না দেখে থাকতে না পারেন, তাহলে আপনি ব্রডব্যান্ড এর কানেকশন নিতে পারেন। কারণ ব্রডব্যান্ড কানেকশন এ আপনি মাসিক একটি নির্দিষ্ট সাবস্ক্রিপশন ফি দিয়ে সারা মাস আনলিমিটেড ভিডিও স্ট্রিমিং ভিডিও দেখতে পারবেন। মোবাইলে ইন্টারনেট প্যাক ক্রয় করে যদি আপনি অনলাইনে ভিডিও থাকেন। এক্ষেত্রে আপনার যদি প্রতিমাসে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা ব্যয় হয়। এক্ষেত্রে আপনি যদি ব্রডব্যান্ড ব্যবহার করেন, তাহলে আপনার দুই থেকে তিনশ টাকা মত ব্যয় হবে। এক্ষেত্রে আপনার আরো ৩০০ টাকা সঞ্চয় করার একটি সুযোগ তৈরি হবে।

বন্ধুদের সাথে অতিরিক্ত ঘোরাফেরা বাদ দিয়ে টাকা সঞ্চয় করুন

সাধারণত বর্তমান সময়ে আমরা যেখানে যাই সেখানেই বন্ধুদের দেখা সাক্ষাৎ হয়। যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়াতে আমরা সবসময় একটিভ থাকি। এজন্য যেকোনো বন্ধুকে মেসেজ দিলেই বন্ধু চলে আসে। সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন জায়গায় আমাদের ঘুরাফিরা বেশি হয়। কিন্তু এই ঘোরাফেরার মধ্যে আমাদের গাড়ি ভাড়ার খরচ এবং চা নাস্তা খাওয়ার পিছনে অনেক টাকা নষ্ট হয়ে যায়। আমরা যখন এদিক-ওদিক ঘুরাফিরা করি বন্ধুদের নিয়ে, তখন কিন্তু আমরা অধিকাংশ ফাস্ট ফুড জাতীয় খাবার বেশি খায়। কিন্তু এই জাতীয় খাবার গুলো আমাদের শরীরের জন্য বেশি ভালো নয়।

বন্ধুদের সাথে অতিরিক্ত ঘোরাফেরা বাদ দিয়ে টাকা সঞ্চয় করুন
বন্ধুদের সাথে অতিরিক্ত ঘোরাফেরা বাদ দিয়ে টাকা সঞ্চয় করুন

আর আপনি বন্ধুদের সাথে ঘোরাফেরা করে কিন্তু টাকা খরচ না করে ও পারবেন না। এই জন্য আপনাকে অবশ্যই একটি বিষয় মনে রাখতে হবে। টাকা সঞ্চয় করার জন্য আপনাকে বন্ধুদের সাথে অতিরিক্ত ঘুরাফিরা ও আড্ডা দেওয়া রোধ করতে হবে। তাহলে একদিকে যেমন আপনার নিজেকে ফাস্টফুড খাওয়া থেকে বিরত রাখা যাবে। অপরদিকে আপনার অনেক বড় অঙ্কের একটি টাকা সঞ্চয় করার সুযোগ তৈরি হবে।

আরও পড়ুন:   শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের পদ্ধতি ও সঠিক গাইড

এই কৌশলটি আপনি কিছুদিন অনুসরণ করে দেখুন। আপনি অবশ্যই ফলাফল পাবেন এখান থেকে। এবং প্রচুর পরিমাণে টাকা আপনি এখান থেকে সঞ্চয় করার একটি সুযোগ তৈরি করতে পারবেন।

মাসিক বাজারের একটি পরিকল্পনা তৈরি করুন:

সারা মাস আমাদের ফ্যামিলিতে বিভিন্ন রকমের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ও খাবারের জিনিসপত্র কিনতে হয়। এক্ষেত্রে আমরা কোন পরিকল্পনা তৈরি না করে যদি প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো ক্রয় করতে থাকি। তাহলে আমাদের ব্যয় হবে আনলিমিটেড। এজন্য আপনি যদি একটি খাবারের মাসিক পরিকল্পনা তৈরি করে ফেলেন, তাহলে আপনি কি কি বাজার করবেন? সে বিষয়ে আপনার একটি ধারণা তৈরি হবে…

এবং পুরো মাস বাজার করলে কত টাকা আপনার খরচ হতে পারে। সে বিষয়ে আপনি একটি ধারণা পেয়ে যাবেন। সুতরাং এই জন্য আপনাকে অবশ্যই একটি মাসিক বাজারের পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। যেন আপনার ফ্যামিলিতে কত টাকার বাজার আপনাকে করতে হবে। সে বিষয়ে আপনি বুঝতে পারেন।

মাসিক বাজারের একটি পরিকল্পনা তৈরি করুন
মাসিক বাজারের একটি পরিকল্পনা তৈরি করুন

শুধুমাত্র একটি মাসিক বাজারের পরিকল্পনা তৈরি করে শেষ হবে না। এক্ষেত্রে আপনাকে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে। মাসিক বাজারের পরিকল্পনা তৈরি করার পর নির্দিষ্ট এমাউন্টের আঁকে বাঁকে টাকা আপনাকে কোনো একটা ব্যাংকে সঞ্চয় করে রাখতে হবে। যেন আপনার হাতে টাকা না থাকে। যদি আপনার হাতে টাকা থাকে, তাহলে আবার সেটি খরচ হয়ে যেতে পারে। এ জন্য টাকা সঞ্চয় করার একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হচ্ছে, টাকাগুলো নিজের হাতে না রেখে কোন একটা বিশ্বস্ত ব্যাংকের মধ্যে জমা রাখা।

মাসিক প্রয়োজনীয় বাজারগুলো বাল্ক অর্ডার করতে চেষ্টা করুন:

বাংলাদেশের মধ্যে আসলে এমন পরিস্থিতি এখনো খুবই কম দেখা যায়। বাল্ক অর্ডার করে বাজার ক্রয় করার বিষয়টি অবশ্যই আমাদের সবার মনে রাখা উচিত! বাল্ক অর্ডার বলতে যেটি বুঝানো হয়। আপনার যদি মাসে ৫ লিটার টয়লেট প্রয়োজন হয়, এক্ষেত্রে আপনি ১ লিটার করে তৈল ক্রয় না করে। একসাথে ৫ লিটার তৈল ক্রয় করবেন। তাহলে আপনার দেখা যাবে প্রতি লিটারে ৫ থেকে ১০ টাকা করে সঞ্চয় হবে।

ঠিক একই রকম আপনার বাড়িতে খাবারের চাউল ক্রয় করার ক্ষেত্রে। প্রতিমাসে যদি এক বস্তা চাউল প্রয়োজন হয়, তাহলে আপনি প্রতিদিন চাল ক্রয় না করে। একসাথে মাসের জন্য এক বস্তা চাউল ক্রয় করার চেষ্টা করবেন, তাহলে দেখবেন পুরো এক বস্তা চাউল ক্রয় করে আপনি দুই থেকে তিনশ টাকা অতিরিক্ত সঞ্চয় করতে পারবেন। ঠিক একই রকম পরিবারে অনেক ধরনের প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী করে করতে হয়।

মাসিক প্রয়োজনীয় বাজারগুলো বাল্ক অর্ডার করতে চেষ্টা করুন
মাসিক প্রয়োজনীয় বাজারগুলো বাল্ক অর্ডার করতে চেষ্টা করুন

এধরনের প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী গুলো আপনি পুরো মাসের জন্য বাল্ক অর্ডার করে ক্রয় করুন। উন্নত বিশ্বের মধ্যে অনেকেই এই বাল্ক অর্ডার পছন্দ করে থাকেন টাকার সঞ্চয় করার জন্য। আপনিও যদি এ বাল্ক অর্ডার করার পদ্ধতি আপনার পরিবারের চালু করেন, তাহলে আপনি এখান থেকে খুব ভালো অংকের একটি অ্যামাউন্ট সঞ্চয় করতে পারবেন।

আরও পড়ুন:   ব্যাংকে টাকা জমানোর নিয়ম

টাকা সঞ্চয় করার বিষয়ে একটি সারমর্ম বার্তা

সম্মানিত পাঠক। আমরা এই আর্টিকেলটির মধ্যে কিভাবে টাকা সঞ্চয় করা যায়, বা টাকা সঞ্চয় করার কৌশল ও উপায় নিয়ে আপনাদের কিছু মতামত শেয়ার করেছি। যদি আপনারা এই উপায় গুলো কাজে লাগাতে পারেন, তাহলে অবশ্যই দেখবেন আপনারা ভালো টাকা সঞ্চয় করতে পারতেছেন। যারা এই কৌশলগুলোকে পছন্দ করেছেন। অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন।

যেন আমরা পরবর্তীতে আরো কার্যকর কয়েকটি মজার মজার টাকা সঞ্চয় করার কৌশল আমাদের আর্টিকেলটিতে যুক্ত করতে পারি। আপনাদের কমেন্ট পেয়ে আমরা যখন অনুপ্রাণিত হব, তখন আমরা আমাদের ওয়েবসাইট থেকে আরও দ্রুত এগিয়ে নিতে পারব। এবং প্রয়োজনীয় আর্টিকেল আপনাদের জন্য উপহার দিতে পারব। এটাই হচ্ছে আমাদের চাওয়া আপনাদের কাছ থেকে। আপনারা আমাদেরকে কমেন্ট করে আপনাদের মতামত জানিয়ে দিন। সবাই ভাল থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ!

মন্তব্য করুন