বাসা-বাড়িতে বিদ্যুৎ বিল কমানোর ১০টি উপায় জেনে নিন

বিদ্যুৎ বিল নিয়ে কি আপনি সমস্যায় আছেন। আপনার বাসা বাড়ি থেকে একাধিক বিদ্যুৎ বিল জমা হয়ে যাচ্ছে। তাহলে আজকে আপনি সমাধান নিয়ে নিন বাসা বাড়িতে বিদ্যুৎ বিল কমানোর ১০টি উপায় এখান থেকে জেনে নিন। 

সাধারণত আমরা কিছু ছোট ছোট ভুল করার কারণে আমাদের বাসা বাড়িতে প্রচুর পরিমাণ বিদ্যুৎ নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে আমাদের বিদ্যুতের খরচ বেশি হয় তাই আমরা আজকের এই আর্টিকেলটিতে বাসা বাড়িতে বিদ্যুৎ বিল কমানোর উপায় সম্পর্কে আপনাদেরকে জানাবো।

এক নজরে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সমূহ

বাসা বাড়িতে বিদ্যুৎ বিল কমানোর ১০টি উপায় জেনে নেওয়া যাক

খুবই সহজ কিছু কৌশল অনুসরণ করেই আপনি আপনার বাসা বাড়িতে বিদ্যুৎ বিলের খরচ কমাতে পারবেন। তাই যদি আপনি বিদ্যুৎ বিলের খরচ নিয়ে খুবই সমস্যায় থাকেন, তাহলে কিভাবে আপনি আর বিদ্যুৎ বিলের খরচ কমাবেন সে বিষয়টি জানার জন্য পরিপূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে ফেলুন।

১. অব্যবহৃত কোন জিনিস বিদ্যুৎ লাইনের সাথে যুক্ত করে রাখবেন না

সাধারণত আমরা বাসাবাড়িতে অবহেলা করে কিছু কিছু জিনিস ব্যবহার না করেই বিদ্যুৎ এর সাথে কানেক্ট করে রাখি। এটি আমাদের বিদ্যুৎ বিল বৃদ্ধি করার জন্য যথেষ্ট। যদি আপনার কোন একটি বৈদ্যুতিক যন্ত্র ব্যবহার করার প্রয়োজন না হয়, সেটি অবশ্যই বৈদ্যুতিক লাইন থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখুন। এর ফলে আপনার বিদ্যুতের খরচ অনেক কমে আসবে।

২. শুধুমাত্র রিমোট দিয়ে কোন বৈদ্যুতিক ডিভাইস বন্ধ করবেন না

একটু কষ্ট করে হলেও ম্যানুয়ালি আপনার বৈদ্যুতিক ডিভাইস গুলো বন্ধ করার চেষ্টা করুন। সাধারণত অনেকেই আমাদের মধ্যে রিমোটের মাধ্যমে টিভি ফ্রীজ ইত্যাদি ব্যবহার করার প্রচলন হয়ে গেছে ‌।

আরও পড়ুন:   ২০ টাকার কম রিচার্জ করা যাবে না গ্রামীণফোনে

এই ক্ষেত্রে আপনারা যদি একটু কষ্ট করে রিমোটের মাধ্যমে এইসব ডিভাইস গুলো বন্ধ না করে ম্যানুয়ালি বন্ধ করে দেন, তাহলেই আপনার ডিভাইসগুলোর বিদ্যুৎ খরচ অনেক কমে আসবে।

ফলে আপনার বিলের টাকার পরিমাণ আগের থেকে অনেক বেশি কমে যাবে। যখন একটি রিমোটের মাধ্যমে কোন বৈদ্যুতিক যন্ত্র বন্ধ করা হয়, তখন সেই ডিভাইসটির শুধুমাত্র ব্যবহারিক দিক থেকে বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু তার মধ্যে কার্যক্রম চলতে থাকে ফলে বিদ্যুৎ খরচ হতে থাকে।

৩. সাধারণ লাইট ব্যবহার না করে এলইডি লাইট ব্যবহার করার চেষ্টা করুন

বাসাবাড়ি বা অফিস-আদালতে টাংস্টেনের যে স্বাভাবিক লাইট গুলো রয়েছে, এই লাইটগুলো ব্যবহারের ফলে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল উঠে যায়।

ফলে অন্যান্য বাল্ববের তুলনায় এই লাইটগুলো ব্যবহারে আপনার বিদ্যুৎ খরচ বেশি হয়, তাই যদি টাংস্টেন লাইট গুলোর পরিবর্তে আপনি এলইডি লাইট ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে আপনার বিদ্যুৎ খরচ অনেক কমে আসবে।

বর্তমানে বাজারে নানা ধরনের এলইডি লাইট পাওয়া যায়। এখন থেকে আপনি কম ওয়ার্ডের ভালো মানের এলইডি লাইট ক্রয় করে ব্যবহার করতে পারেন। টাংস্টেন লাইট গুলোর তুলনায় এলইডি লাইট গুলোর কার্য ক্ষমতা অনেক বেশি এবং এগুলো বহুদিন ধরে ভাল সার্ভিস দিতে পারে।

৪. বাসাবাড়িতে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করার সেষ্টা করুন

শুধুমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় না করে সৌরশক্তি ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। প্রাকৃতিক ভাবে যে বিদ্যুৎ আপনি পাচ্ছেন, এটা খুবই কম খরচে আপনি ব্যবহার করতে পারবেন।

আপনার বাসা-বাড়ির ছাদের উপরে কয়েকটি সৌরশক্তির সোলার প্যানেল বসিয়ে প্রাকৃতিকভাবেই আপনি এখান থেকে বিদ্যুৎ সংগ্রহ করতে পারেন। সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারের ফলে আপনার বিদ্যুৎ খরচ অনেক বেশি কমে আসবে। এমনকি আপনি যদি ভাল সোলার প্যানেল ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানির কাছ থেকে আপনাকে বিদ্যুৎ করতে হবে না। 

ভালো বিনিয়োগ করতে পারলে আপনি আপনার আশেপাশের বাসাবাড়িতে আপনার সৌর বিদ্যুৎ থেকে বিদ্যুৎ বিক্রি করে লাভবান হতে পারেন।

আরও পড়ুন:   ৫টি ফ্রি লাইভ টিভি অ্যাপস | Live TV দেখুন মোবাইলে

৫. মানসম্মত তার ব্যবহার:

বাসা বাড়ির ওয়্যারিং এর ক্ষেত্রে আমরা উন্নত মানের তার ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেকে অবহেলা করে থাকি। কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না মানসম্মত উন্নত মানের তার ব্যবহার করলে আপনার বিদ্যুৎ বিল অনেকটা কমে আসবে।

আপনার বাড়িতে ওয়্যারিং এর কাজে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক তার গুলো যদি উন্নত মানের না হয়, তাহলে এগুলোতে কারেন্ট লিকেজ হতে পারে এবং তার গুলোতে পরিবহন ক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে আপনার বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে যেতে পারে।

বৈদ্যুতিক তার ভালো হলে বিদ্যুতের অপচয় রোধ করা যায় ফলে বিদ্যুতের খরচ কম হয়।

৬. দিনের বেলায় প্রাকৃতিক আলো ব্যবহার করুন:

দিনের বেলায় আপনার বাড়িতে বাতি না জ্বালিয়ে সূর্যের আলো থেকে আলো গ্রহন করুন। প্রয়োজনে আপনার বাড়িকে এমনভাবে ডেকোরেট করতে পারেন যেন দিনের বেলায় সূর্যের আলো সঠিকভাবে আপনার বাড়িতে প্রবেশ করেন। 

ফলে এতে আপনার বৈদ্যুতিক খরচ অনেকটা কমে যাবে এবং প্রাকৃতিক আলোতে আপনি লাইট এর চেয়ে ভালো সুবিধা পাবেন।

আপনি একটু যদি চিন্তা করে দেখেন, তাহলে বুঝতে পারবেন বৈদ্যুতিক আলোর তুলনায় প্রাকৃতিক আলো শতগুণে ভালো। তাই কখনো প্রাকৃতিক আলোর সাথে বৈদ্যুতিক আলোর তুলনা করা যাবেনা।

৭. এসি ব্যবহারের ক্ষেত্রে টাইমার সেট করে দিন:

ডিজিটাল অনেকগুলো এসি রয়েছে বর্তমানে যেগুলোতে আপনি টাইমার সেট করে দিতে পারেন। এসি আপনার প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়। তাই যদি আপনি বৈদ্যুতিক খরচ কমিয়ে আনতে চান, তাহলে অপ্রয়োজনীয় মুহূর্তে এসি বন্ধ রাখতে পারেন। 

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় এসি বন্ধ করার জন্য আমাদের মনে থাকে না। এই ক্ষেত্রে আপনি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য টাইমার সেট করে দিতে পারেন, তাহলেই আপনার বাড়ি ঠান্ডা হওয়ার পর নির্দিষ্ট সময় আসলে এসি বন্ধ হয়ে যাবে।

৮. ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে কাজ করার চেষ্টা করুন:

সৌখিন মানুষ বাসাবাড়িতে বিভিন্ন বৈদ্যুতিক যন্ত্র ব্যবহার করে কাজ করে থাকেন। ফলে এখানে তাদের বিদ্যুৎ বিল অনেক বেশি বেড়ে যায়। তাই আপনি যদি বিদ্যুৎ বিল কমানোর উপায় জানতে চান, তাহলে আমি বলব আপনি ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করুন। 

আরও পড়ুন:   ফ্রিল্যান্সারদের ১০টি বৈশিষ্ট্য

যেমন আপনার বাসা বাড়িতে মসলা পেস্ট করার ক্ষেত্রে ব্লেন্ডার ব্যবহার না করে শিলা ব্যবহার করে ম্যানুয়ালি মসলাগুলো পেস্ট করতে পারেন।

অনেকে কাপড় ধোয়ার জন্য ওয়াশিং মেশিন ব্যবহার করে থাকেন। এক্ষেত্রে আপনি ওয়াশিং মেশিন ব্যবহার না করে তার পরিবর্তে আপনার হাতেই ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে আপনার কাপড় গুলো পরিষ্কার করার চেষ্টা করুন। 

ফলে আপনার বৈদ্যুতিক খরচ অনেক কমে যাবে এবং নিজের কাপড় নিজের হাতে মেনুয়ালি দুয়ার কারণে আপনার শরীরের একটা ব্যায়াম হয়ে যাবে।

৯. কিছুদিন পর পর লুজ কানেকশন চেক করুন

যতই টাইট করে আপনি বৈদ্যুতিক সংযোগ দেন না কেন কিছুদিন পরপর এগুলো অবশ্যই চেক করে লুজ কানেকশন গুলোকে ঠিক করতে হবে। 

লুজ কানেকশন এর ফলে বৈদ্যুতের লস অবশ্যই বৃদ্ধি পায় এবং অনেকক্ষেত্রে শর্ট সার্কিট তৈরি হয়।

পাশাপাশি আপনার বিদ্যুৎ খরচ অনেকটা বেড়ে যায়। শর্ট সার্কিট হওয়ার ফলে অনেক সময় বৈদ্যুতিক যন্ত্র গুলো নষ্ট হয়ে যায়। যদি আপনি বৈদ্যুতিক যন্ত্র গুলিকে নিয়মিত চেক করে থাকেন, এবং শট সার্কিট থেকে বাঁচার জন্য সংযোগ গুলোকে পরীক্ষা করেন, তাহলে আপনার বিদ্যুৎ খরচ অনেকটা কমে যাবে।

১০. ঘুমানোর পূর্বে অপ্রয়োজনীয় সব লাইট বন্ধ করে দিন

আমাদের ঘুম আসলে শরীরে আলসেমি চলে আসে তাই আমরা অনেক সময় বাড়িতে অতিরিক্ত বাতি জ্বালিয়ে রেখে ঘুমিয়ে যায়। যদি একটু আলসেমিকে দূরে ঠেলে ঘুমানোর পূর্বে অপ্রয়োজনীয় সবগুলো লাইট বন্ধ করে ঘুমান, তাহলে সারারাত আপনার লাইট গুলো যেমন বিশ্রাম পাবে সেই সাথে আপনার বৈদ্যুতিক খরচ অনেক বেশি কমে আসবে।

যদি আপনি বৈদ্যুতিক খরচ কমানোর জন্য কাজ করতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনার কষ্ট করে ঘুমানোর পূর্বে অপ্রয়োজনীয় সবগুলো লাইট বন্ধ করে দিন। ফলে আপনার বৈদ্যুতিক খরচ কমার পাশাপাশি আপনার লাইটগুলোর সার্ভিস ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

সম্মানিত পাঠক, আমরা আমাদের এই লেখার মধ্যে এমন ১০টি বৈদ্যুতিক বিল কমানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি। যেগুলো আশা করছি আপনাদের অবশ্যই কাজে লাগবে। আপনারা যদি এই ১০টি কৌশল নিয়মিত অনুসরণ করেন, তাহলেই আপনাদের বাসা বাড়িতে বিদ্যুৎ বিল ৬০% থেকে ৮০% শতাংশ পর্যন্ত কমে আসবে।

আপনার যদি এই বিষয়টিতে বিশ্বাস না হয়, তাহলে আপনি নিজেই কয়েক মাস এভাবেই কষ্ট করে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। আশা করছি আপনার বিদ্যুৎ বিল আর বেশি আসবে না। আমাদের জানা মতে এই ১০টি হচ্ছে বিদ্যুৎ বিল কমানোর সবচেয়ে ভালো উপায়

মন্তব্য করুন